
জোছনায় ফুল ফুটেছে পান্ডুলিপি তৈরীর গল্প
May 8, 2014অহংকার, হিংসা,একজন মানুষ এবং তার সৃজনশীল কাজকে ধ্বংস করে দেয়। সৃজনশীলতা কোন প্রতিযোগিতার বিষয় নয়। এটা মনের গভীরের বিষয়। জোর করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে কখনই মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় না। প্রকৃতিতে যা কিছু দেওয়া হবে ঠিক সেগুলোই দ্বিগুণ করে প্রকৃতি ফেরত পাঠাবে। ভালো দিলে ভালো, খারাপ হলে খারাপ।প্রকৃতির ডিজাইন এভাবেই করা। খুবই নির্ভুল ও বিশুদ্ধ ডিজাইন। কারণ আপনি আমি এ ডিজাইন সৃষ্টি করিনি। আমরা চারপাশে যদি তাকাই, দেখতে পাবো যারা এই পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়েছেন-খ্যাতি অর্জন করেছেন তারা প্রত্যেকেই অহংকার ও ঈর্ষা মুক্ত ছিলেন। চারপাশে ভালোবাসা বিলিয়ে দিয়েই ভালোবাসা পেয়েছেন।
প্রসঙ্গ বইমেলাতে ফিরে যাই।
বইমেলা-২০২১ নানান কারণে সবার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বেস্ট সেলার লেখক ও বেস্ট সেলার বই নিয়েও কম আলোচনা হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন মিডিয়াতে ঝড় উঠে গেছে। প্রকাশক যখন কোন একটা বই প্রকাশ করে তার কত পার্সেন্ট অনলাইন আর কত পার্সেন্ট অফলাইনে বিক্রি হয়। এর সঠিক উত্তরটি প্রকাশক ও লেখকের জানা আছে। এবার পাঠকদেরকে ছাড় দেওয়া হয়নি। তাদেরকেও বিশাল এক সমালোচনার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যত লেখক খ্যাতি অর্জন করেছেন, বিখ্যাত হয়েছেন তারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের যোগ্যতার মধ্যে দিয়ে এসেছেন। একটা জায়গা করে নিয়েছেন। এতে করে অন্য কারও জায়গা কমে বা ছোট হয়ে যায়নি। এখনো যদি নতুনরা যার যার মত একটা অবস্থানে এসে পৌঁছায় এতে করেও পরস্পরের কারও জায়গা কমে যাবে না। যে যার মত নিজের জায়গাতেই অবস্থান করবে। ঠিক গ্রহ-নক্ষত্রের নিজ নিজ অবস্থানের মত। এখনতো বিজ্ঞানের যুগ। টাইম এবং স্পেস সবারই বুঝার কথা।
এবার স্পোকেন লার্নিং এর বইগুলো খুব বেশি বিক্রি হয়েছে। বেস্ট সেলার তালিকায় নামও উঠেছে। স্পোকেন লার্নিং বইগুলোতো এমনিতেই সারা বছর জুড়ে প্রচুর চাহিদা থাকে। বলতে গেলে, সকল স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে, চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী, বেকার ছেলে-মেয়ে, ঘরের গৃহিনী পর্যন্ত সবার কাছেই। এ বইগুলোর এত পরিমাণ চাহিদা যে, অনলাইন ও অভিজাত বইয়ের দোকানসহ হকার মার্কেট পর্যন্ত দখল করেছে। শুধু তাই নয়, ট্রেনে, বাসেও বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিনই বেস্ট সেলার হচ্ছে। আবার নতুন করে বেস্ট সেলার হওয়ার কী আছে?
এছাড়া মোটিভেশনাল বইগুলোও বিশ্বের সবদেশে বিক্রির শীর্ষে থাকে। আবার ইসলামী বই প্রচুর বিক্রি হয়েছে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। অন্য ধর্মের কোন বই প্রচুর বিক্রি হলে তখন না হয় চিন্তার একটা বিষয় ছিল। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। ইসলাম ধর্মের বই বেশি বিক্রি হবে এটাই স্বাভাবিক।
উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বইগুলোর মধ্যে উপন্যাসই বেশি বিক্রি হয়। বরাবরের মত এবারও তাই হয়েছে। এখনকার তরুণরা খুব ভালো লিখছে। চিন্তা চেতনার মধ্যে সুন্দর একটা পরিবর্তন এসেছে। এই লেখাগুলো বিশ্বের দ্বারগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যেন বিশ্বসাহিত্যের সাথে আমাদের সাহিত্যও সবাই পড়তে পারে। এর মধ্যে দু’একজন গলা উচিয়ে আঙ্গুল উচিয়ে বলছে-পাঠকরা সস্তা প্রেমের গল্প, উপন্যাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কী ভয়ংকর !এদের কথা থেকেই এদের জ্ঞানের পরিধি বুঝা যায়। না কি একটা দেশের শিল্পসাহিত্যকে ভেঙ্গে ফেলার কোন ষড়যন্ত্র।
উপন্যাস মানুষের জীবন সংসার থেকেই রচিত হয়। জীবনের কথাই বলে, জীবনকে শিক্ষা দেয়। উপন্যাস বলতেই কী শুধু প্রেম, ভালোবাসা? উপন্যাস বিভিন্ন শ্রেণির হয়। সামাজিক, ঐতিহাসিক, মনস্তাত্বিক, রাজনৈতিক, গোয়েন্দা, আত্মজৈবনিক, কাব্যধর্মী, পত্রোপন্যাস, আঞ্চলিক ও রহস্য উপন্যাস। যদি সম্পূর্ণ প্রেমের উপন্যাসও হয়ে থাকে তবে প্রেম, ভালোবাসাকে ছোট করে দেখার কিছু নেই। মানব জীবনের সৃষ্টির আদির দিকে লক্ষ করলেই বুঝা যাবে প্রেম, ভালোবাসা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রেম, ভালোবাসার জন্যই পৃথিবীতে এসে জীবন সংসার করতে হচ্ছে। আপনি আমি আজ পিতা-মাতা পেয়েছি।
লেখক প্রসঙ্গ,
সাহিত্য পড়ার জ্ঞান সবার থাকলেও সাহিত্য লেখার জ্ঞান সবার থাকে না। কারও কারও থাকে। সৃষ্টিকর্তার আর্শিবাদ প্রাপ্ত হয়েই একজন লেখক হয়ে উঠেন। কাজেই প্রতিযোগিতায় পিছনে ফেলে একজন লেখককে ছোট করে দেখার কিছু নেই। তবে কেউ কেউ সবার থেকে এগিয়ে থাকবে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ সবার থেকে এগিয়ে ছিলেন, এখনো আছেন।
বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়,তারাশংকর রবীন্দ্রনাথের খুব কাছের মানুষ ছিলেন। শান্তিনিকেতনে দুজনেরই খুব যাওয়া আসা ছিল। একই বাতাসে, একই আকাশ তলে, একই সময়ে সাহিত্য রচনা করার পরও তারা রবীন্দ্রনাথের জায়গায় আসতে পারেননি। কারণ রবীন্দ্রনাথের দেখার দৃষ্টি আর তাদের দেখার দৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য ছিল। রবীন্দ্রনাথ তার চিন্তা চেতনা,অনুভব, উপলব্ধির মধ্যে দিয়ে অন্য সবার থেকে আলাদা হয়ে ছিলেন, এখনো আছেন। প্রত্যেক লেখকের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি ঠিক তাই। নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা ,উপলব্ধি ও দেখার দৃষ্টির মধ্যে দিয়ে একজন লেখন অন্য একজন লেখক থেকে আলাদা হয়ে থাকবে। এখানে প্রতিযোগিতার কিছু নেই।
কেউ কেউ নতুন ও তরুণ লেখকদের খুব হেয় প্রতিপন্ন করছে। তারা কী সব লিখছে! ভাব দেখে মনে হয় রবীন্দ্রনাথের ছেলে রথীন্দ্রনাথ হয়ে গেছে। রবীন্দ্রনাথের সময়ের লোকজনেরা রবীন্দ্রনাথকে এমন সব কথা বলত। তাই বলে রবীন্দ্রনাথ কখনো থেমে থাকেন নি। তার সাধনায় ঠিকই জায়গা মত পৌঁছে গেছেন। এখন পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যে দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন। বলতে গেলে আমরা সত্যিই ভাগ্যবান।অনেক পরের প্রজন্ম হয়েও আমরা রবীন্দ্রনাথকে পড়তে পারছি। যা ঐ সময়ের লোকেরা তাদের অহংকার ও অজ্ঞতার কারণে রবীন্দ্রনাথকে চোখের সামনে দেখেও স্পর্শ করতে পারেনি।
প্রসঙ্গ সফলতা।
জীবনে সফল হওয়ার জন্য ছোট খাট কোন রাস্তা নেই। আমি যখন লেখালেখি শুরু করি প্রথম প্রথম দুলাইন লিখতেই সমস্ত শরীর দিয়ে ঘাম ঝরে ছিল। আবার আমার যখন প্রথম ভিডিও প্রকাশ হয় মাত্র তিনটা ভিউ হয়েছিল। অনেকেই দেখে হেসেছিল। অবাক লাগছে? সবার হাসি পেলেও ঐ ভিডিও, ঐ দুলাইন লেখাটাই ছিল আমার প্রথম সিঁড়ি। জীবনের চূড়ান্ত জায়গাতে পৌঁছাতে হলে প্রথম সিঁড়িতে পা রাখতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
মঙ্গল গ্রহে যাত্রা করতে গেলেও প্রথম পায়ে হাঁটার মধ্যে দিয়েই যাত্রা শুরু করতে হবে।
সফলতার সংজ্ঞা একেকজনের কাছে একেক রকম। সবাইকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার নাম যেমন সফলতা আবার কোন কোন প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলাটাও একটা বিরাট সফলতা।
গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য প্রত্যেকের একটা রোড ম্যাপ আছে। সেই ম্যাপ অনুযায়ী এগিয়ে চলার সময় অনেক রকম সফলতা বা ব্যর্থতা স্পর্শ করবে।কিছু ব্যর্থতা দেখে অনেকেই হাসবে। আবার কিছু সফলতা দেখে অনেকের মনেও হবে বিরাট কিছু অর্জন। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই যদি ঝরে পরা হয় তাহলে ঐসব লোক দেখানো সফলতার মূল্য কোথায়? নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর পর যখন সফলতার পতাকাটা উড়বে তখন আর সেদিন কাউকে আঙ্গুল উচিয়ে সাক্ষ্য দিতে হবে না, ঐ যে ঐ লোকটি সফল। চোখ বন্ধ করে নিজেই নিজের অবস্থান বুঝা যাবে। আবার বেস্ট সেলার প্রসঙ্গে ফিরে যাই।
নিউইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলার বইয়ের একটা তালিকা তৈরি করে। এ বেস্ট সেলার লিস্টকে সমস্ত বিশ্বই খুব গুরুত্ব দেয়। কোন একটা বই লাখ কপি বিক্রি হলেই যে এই লিস্টে উঠে যাবে বিষয়টি এমন নয়। অন্যদিকে পাঁচ হাজার কপি বিক্রি হয়েও বেস্ট সেল লিস্টে উঠে যেতে পারে। তারা দেশের কয়েক হাজার খুচরা বিক্রেতা থেকে সপ্তাহে রিপোর্ট সংগ্রহ করে কোন বই কত কপি বিক্রি হয়েছে। এরপর তাদের পদ্ধতি অনুযায়ী বেস্ট সেলার লিস্ট প্রকাশ করে থাকে। এদিকে যদি কোন বই শুধু একটা এলাকা থেকে বা কোন একটা দোকান থেকে লাখ কপিও বিক্রি হয়ে যায় তাহলেও হয়ত টাইমসের জরিপে উঠবে না।
বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে রকমারি ডট কম নামের একটা অনলাইন বুকশপ বেস্ট সেলার বইয়ের তালিকা প্রকাশ করছে। কিছুদিন আগে তারা এ বিষয়ে একটা আর্টিকেল প্রকাশ করেছে। সেখানে উল্লেখ করেছে-একটা বই চার হাজার কপি বিক্রি হওয়ার পরেও রকমারি বেস্ট সেলার লিস্টে উঠে নাও আসতে পারে আবার অপরদিকে মাত্র তিনশ কপি বিক্রি হয়েই লিস্টে উঠে যেতে পারে। আর এভাবে একজন লেখক হয়ে যেতে পারে প্রেস্টিজিয়াস বেস্ট সেলার অথর।
দিন শেষে প্রকাশক টালিখাতা খুলে তার ইনভেস্টমেন্টের লাভ ক্ষতিই দেখবেন। সত্যিকার অর্থে মোট কত কপি বই বিক্রি হয়েছে সেই হিসাবই কষবেন। আবেগ দিয়ে মুখে হাসি ফুটানো গেলেও বাস্তব ছাড়া জীবন সংসার চলে না।
অহংকার,হিংসা,দুশ্চিন্তা ,নার্ভ ও গ্ল্যাণ্ড ছিড়ে ফেলে নিজেকে ধ্বংস করে দেয়।
তাই অহংকার ত্যাগ করে বয়সের তারতম্য ভেদ ভুলে সবাইকে নিজ সন্তানের মত ভালোবেসে এগিয়ে যেতে থাকুন। ঠিক গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন। তখন পৃথিবী তার সমস্ত ভালোবাসা নিয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ গোলাপ হাতে আপনাকে অভিনন্দন জানাবে। যদিও সেদিন এই ভালোবাসা গুচ্ছ গুচ্ছ গোলাপ অভিনন্দন আপনার আর প্রয়োজন নেই। জন্ম থেকে শুরু করে আপনিই তিল তিল করে এইসব দিয়ে এসেছেন। আজ তার সামান্যই রিটার্ন মাত্র।
সবাইকে শুভ কামনা ও ভালোবাসা।