
লেখক পরিচিতি
নিশো আল মামুন ১৯৮৬ সালে জামালপুর, বকশিগঞ্জে জন্মগ্রহন করেন। বাবা মোঃ শাহজামাল (যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, ১১নং সেক্টর) এবং মা সুলতানা রাজিয়া। তিনি বাবা-মায়ের কনিষ্ঠ পুত্র।
২০১২ সালে স্ট্র্যাটিজিক ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে যুক্তরাজ্যের চার্চিল কলেজ থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করেছেন।
একই সঙ্গে তিনি সিল্ভা আলট্রামাইন্ড এবং টাচ হিলিং গ্রাজুয়েট। ২০১৯ সালে সিল্ভা আলট্রামাইন্ড কোর্স এবং ২০২৪ সালে টাচ হিলিং কোর্স এম কিউ মিশন হতে সম্পন্ন করেন।
কলেজ জীবন থেকেই মেতে উঠেন গ্রুপ থিয়েটার নিয়ে। অমিমাংসীত সমাপ্তি (প্রকাশকাল ২০১২ সাল) উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তার সাহিত্যজগতে আত্মপ্রকাশ।তিনি ২০১৬ সালে আমরা কুঁড়ি (জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন) সহিত্য সম্মাননা এবং ২০১৯ সালে পচ্চিমবঙ্গের ‘বাংলা মৈত্রী লেখক সংসদ সাহিত্য সম্মাননা’ লাভ করেন।
অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ এ প্রকাশিত প্রেমিকার কঙ্কাল উপন্যাসের জন্য তিনি আর্টলিট সেরা বই পুরষ্কার লাভ করেন।
নিশো আল মামুন এর প্রকাশিত উল্লেখ যোগ্য গ্রন্থের মাঝে রয়েছে অমিমাংসীত সমাপ্তি, ভোরের ঝরা ফুল,জ্যোৎস্নার বিয়ে, নিখিলের নায়ক, বসন্ত দুপুরের নীলাকাশ, গৃহত্যাগী জোছনা, নীল আকাশের নীচে, কছে দূরে,শেষ স্পর্শ, সুখের গহিনে শোক, নীলস্বপ্ন, জোছনায় ফুল ফুটেছে, মানুষছবি, নীল চিঠি, প্রেমিকার কঙ্কাল , নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ।
"মানুষ কখনো টাকার অভাবে, খাদ্যের অভাবে, সংকীর্ণ হয় না। মানুষ সংকীর্ণ হয় তার চিন্তার আকাশ সংকীর্ণ হলে।"
"কাক ডাকা ভোর।
ঘুম থেকে জেগে উঠে জানালা খুলে আমি হতভম্ব। আকশটাও বেশ পরিষ্কার। বেশ পরিষ্কার বলা ঠিক হলো না। একদম পরিষ্কার। ঘন নীলাকাশ।
মাঝে মধ্যে কিছু সাদা ছেঁড়া মেঘের টুকরো পূর্ব থেকে পশ্চিমে ভেসে যাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে গেলে, সমস্ত আকাশ রঙ্গভূমিতে মেঘ ও রৌদ্র, দুইটি মাত্র অভিনেতা, আপন আপন অংশ অভিনয় করছে।
আমাদের বাড়িতে সকালের দিক হৈ চৈ একটু বেশি হয়। আজ হৈ চৈ নেই। নেই কেন, এখনো বুঝা যাচ্ছে না। কী আশ্চর্য! আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই দেখি পাশের বাসার দু’তলার কবুতরগুলো সব উড়ছে।
শুধু একটি কবুতর দলছুট হয়ে তার নিজের মতো উড়া-উড়ি করছে। তার সাদা পাখা আলোয় রূপার মতো চকচক করছে। কবুতরটাকেও বেশ সুন্দর লাগছে। বেশ না, খুব সুন্দর লাগছে। আসলে ‘বেশ’ শব্দটা উচ্চারণ করা আমার একটা দোষ। আজকের সকালটা শুরু হলো সমস্তটা সুন্দর দিয়ে। আজকের তারিখটা কত? তারিখের হিসাব রাখিনা। দিনের হিসাব রাখতে হয়। কাল সোমবার, আমাকে বাজারের ব্যাগ নিয়ে দৌড়াতে হয়।
সপ্তাহের এই একটা দিন আমাদের বাড়িতে বাজারের হুলুস্থূল কাণ্ড ঘটে। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও কোনো হিসাব হয় না। এর কারণ এখনো রহস্যজনক।"




মা, কেমন আছ তুমি?
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম থেকে জেগে উঠেই তোমাকে ভীষণ মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে এক্ষুণি দৌড়ে গিয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরি। তোমার আঁচল তলে লুকাই। তোমার গায়ের গন্ধ নিই। পৃথিবীর সমস্ত সুখ, আমার সমস্ত সাহস তো তোমার ঐ আঁচল তলেই। তুমি আমার পৃথিবী। মা, তোমার কোলেই তো আমার প্রথম পৃথিবী দেখা। আমার প্রথম দৃষ্টি ছিলে তুমি, তোমাকেই প্রথম দেখা হয়েছে। আমার প্রথম ডাক তুমি। আমার প্রথম জ্ঞান তোমার কাছ থেকেই পাওয়া। তোমার কোলে বসেই আমার প্রথম চাঁদ দেখা, ঐ আকাশ চেনা। মাঝে মাঝেই মনে হয়Ñ আবার আমি শিশু হয়ে যাই। তোমার ঐ আঁচল তলে লুকাই। আমার পৃথিবীর সমস্ত ভয় কেটে যাক। কত দিন, মনে হয় কত সহস্র দিন ধরে দেখি না তোমায়। মা, কেমন আছ তুমি? সেদিন প্রথম তুষারপাত হয়েছে। তুষারে সমস্ত লন্ডন ঢেকে গেল। চারদিক সাদা হয়ে উঠল। শুভ্র সাদা। কী যে সুন্দর সে দৃশ্য! চারপাশ এত সুন্দর, চারপাশে এত কিছু আছে, তবু সারাক্ষণ মনে হতে থাকে- কী যেন কী নেই! রূপ সজ্জার এ লন্ডনে তোমাকে ভীষণ মনে পড়ে।
মা, কেমন আছ তুমি?
তোমার ডায়াবেটিস কী খুব বেড়ে গেছে?
ডাক্তার দেখিয়েছো তো? নাকি বাহানা দেখিয়ে বলো, আমার কোনো অসুখ নেই। ডাক্তার দেখানো লাগবে না। মিথ্যে বলে সংসারের খরচ বাঁচাও? খাবার বেলাতেও কী তোমার আগের নিয়মই আছে? সবাইকে খাইয়ে, তারপর সবার শেষে তুমি খেতে বস। এটোবাসন মাজো। মাগো কেমন আছ তুমি? ইচ্ছে করছে, দৌঁড়ে গিয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরি। তোমার কণ্ঠস্বর শুনি। তোমার মুখোমুখি বসি। তোমার সঙ্গে গল্প করি। তোমাকে আমার গল্প শোনাই। সবাই তো শুধু জয়ের গল্পই বলে। আমি না হয় তোমাকে আমার পরাজয়ের গল্পই শুনালাম। জয়ী হয়েও কীভাবে আমি নিজের কাছে নিজে হেরে গেলাম। নিজের কাছে নিজে পরাজিত হলাম। তুমি আমার সে পরাজয়ের গল্প শুনতে শুনতে আমার চোখের জল তোমার আঁচল দিয়ে খুব যত্ন করে মুছে দিলে। মা, তোমাকে এখন আমার খুব মনে পড়ছে। তোমাকে ছুঁতে খুব ইচ্ছে করছে। তোমার সঙ্গে ভীষণ রকম পাগলামি করতে ইচ্ছে করছে। তোমাকে খুবই মনে পড়ছে। মা, কেমন আছ তুমি? আমি ভালো নেই।