
নিখিলের নায়ক
January 27, 2025
সাহারা
January 27, 2025আব্বা আপনাকে খুব মনে পড়ে।আব্বা আপনাকে খুব মনে পড়ছে! সারারাত আমার ঘুম হয় না । কিছুতেই ঘুমোতে পারি না ।শুধু বিছানায় এপাশ ওপাশ করি।সমস্ত শরীর ব্যথায় নীল হয়ে উঠে। দম বন্ধ হয়ে আসে। পাঁজরের হাড় গুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে যায়। এক সময় মনে হয় চিৎকার করে কেঁদে উঠি!
আপনি যেদিন চলে যাবেন ,সেদিন সকাল থেকে কেন জানি অকারণে আমার চোখের জল ঝরছিল।আমি ভীষণ অস্থির হয়ে উঠেছিলাম। সবাই হাসপাতালের লবিতে সোফায় বসে আছে, আর আমি মেঝেতে বসে শোকের কান্না কাঁদছিলাম। কতবার যে আপনাকে দেখতে গিয়েছি। শেষবার যখন আপনাকে দেখতে গেলাম, দেখি –আপনি শুয়ে শুয়ে কি যেন ভাবছেন। আপনার ডায়ালাইসিস চলছে । হাতে পায়ে কতরকম ক্যানোলা লাগানো। টিউব লাগানো। দেখে আমার খুব খারাপ লাগলো। মনে হলো, আপনি এখানে কেন শুয়ে আছেন । আপনি আমার বাসায় থাকবেন। নিভানের সঙ্গে খেলবেন। আপনি যখন নিভানের সঙ্গে খেলেন, গল্প করেন , দেখে আমার যে কি আনন্দ হয়।আব্বা আপনি শুয়ে শুয়ে কি ভাবছিলেন?
আপনার দিকে যখন গভীর দৃষ্টিতে তাকালাম, আমার মনে হলো, আপনি বড় এতিম একজন মানুষ। পাশে আপনার বাবা মা নেই। আমি সন্তান হিসাবে আর কতটুকু করতে পারছি! আপনাকে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করল , কেন জানি সাহস হলো না। সন্তান বড় হলে বুঝি দূরত্ব বেড়ে যায়?
ঐ মুহূর্তে নিঃশব্দে আপনি আমাকে যা কিছু সেন্ড করেছিলেন, আপনার সেই মনের ভাষা আমি পুরোটাই রিসিভ করেছিলাম।আমি আপনার নিঃশব্দ ভাষার সবটাই বুঝতে পেরেছিলাম।
আমি যখন আপনার কপালে হাত রাখলাম ,বললাম, আব্বা আপনার কেমন লাগছে? আপনি বললেন, সমস্ত শরীরে অনেক ব্যথা ছিল , এখন নেই। তখন আমার কি যে খারাপ লাগছিল। আহা বাজান আমার! এটাই ছিল আপনার সঙ্গে আমার শেষ কথা। পরমুহূর্তেই সব ওলট পালট হয়ে গেলো। আমাদের সংসার, স্বপ্ন, সব আয়োজন ভেঙ্গে গেলো।
আপনি যে চলে যাবেন আমি কয়েক মাস আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। আমি একটা কঠিন সময়ের মুখোমুখি হওয়ার হিসাব কষছিলাম। সে সময়টা আমার খুব অস্থির লাগছিল। কিছু ঠিকমতো করতে পারছিলাম না। স্থির থাকতে পারছিলাম না। বুকের গহিন থেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না আসত।
এক রাতে লেখার টেবিল থেকে উঠেছি মাত্র। ঘুমোতে যাব।আড়াইটা বাজে। দেখি- মেঝেতে একটা খাটিয়া। সেখানে সবুজ চাদরে আপনার লাশ মুড়িয়ে রাখা। কি আশ্চর্য! আপনার লাশ হবে কেন?
বেশ অবাক হলাম। কিছু বুঝে উঠার আগেই দৃশ্যটা মুহূর্তে মিলে গেলো।
লেকশোর হোটেলের মালিক কাজি তারেক ভাই এবং তার স্ত্রী হুমায়রা আপা সৈয়দ হারুন স্যারের সেমিনার উপলক্ষে খাবারের বিশাল আয়োজন করেছেন। কত কত আইটেম। সবাই ঘুরে ঘুরে দেখছে ,প্লেটে তুলে নিচ্ছে, খাচ্ছে। আমিও প্লেটে তুলে নিয়েছি, খেতে বসব ঠিক সেই মুহূর্তে আমার বুকের ভিতরে প্রচণ্ড একটা ঝাকি দিয়ে উঠলো। বুকটা খালি হয়ে গেলো। মনে হলো, সুন্দরতম কি যেন একটা হারিয়ে যাচ্ছে। প্লেট রেখে দিলাম। হুমায়রা আপা, তারেক ভাই, সৈয়দ হারুন স্যার ঘুরে ঘুরে এসে বারবার কারণ জিজ্ঞাস করলেন ,কেন খাচ্ছি না, কেন খাব না। এর কোন উত্তর কখনই দেয়া যায় না।
আপনার অপারেশনের পর অক্টোবরের নয় তারিখ যখন আপনি আমার বাসা থেকে চলে যাচ্ছেন, গাড়িতে উঠতে যাবেন , ঠিক সেই মুহূর্তে আমি আপনার সঙ্গে একটা পাগলামি করে বসলাম। গাড়ির দরজা হটাত বন্ধ করে দিয়ে বললাম, আব্বা আপনাকে যেতে দিব না। আপনি পাগলামি দেখে বেশ অবাক হয়েছিলেন। এক বিস্ময় দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়েছিলেন।
আপনি চলে যাবার পর সারা রাত আর ঘুম হলো না। যদিও শেষ রাতে একটু ঘুমালাম তখন একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গল । দেখি- আপনার জানাজা হচ্ছে। শত শত মানুষ এসে উপস্থিত হয়েছে।জানাজা পড়াচ্ছেন শ্রদ্ধেয় খালু ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। ঘুমের মধ্যে প্রচণ্ড চিৎকার করে উঠলাম। আঞ্জুম প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়ে ঘুম ভাঙ্গাল। বলল, এই কার জানাজা?
আব্বার!
বাবার! কি বলছ এসব?
হ্যাঁ।
আশ্চর্য হলাম! খালুর সঙ্গে আমার কথা হয় না, যোগাযোগ হয় না, তাকে কখনো ভাবি না। তাকে স্বপ্নে দেখতে যাব কেন? তিনি তো অনেক দূরের মানুষ। আর এসব স্বপ্ন দেখার মানে কি? পরে বুঝতে পারলাম,
আপনি আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। আপনার জানাজায় গার্ড অফ অনার দেয়া হবে। তাই পুলিশের বড় কোন অফিসার আপনার জানাজা পড়াচ্ছেন।
শেষ দিকে আপনি আমাকে খুব ফোন দিতেন। সময় অসময় ,যখন তখন। আমার নানান বিষয়ে খোঁজখবর নিতেন।একদিন আমি বলেই বসলাম, আব্বা আমি খুব ব্যস্ত মানুষ, লেখালেখি করি,ব্যবসা বাণিজ্য করি। আপনি অভিমানে ফোন রেখে দিলেন। আপনি যে আমার চেয়ে ব্যস্ত , আপনার যে এত তাড়া কে জানত! আপনার কাছে আমার দুই হাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়া হলো না। আহা বাজান আমার!
আপনি প্রায়ই একটা অভিযোগ করতেন, নিশো কথায় বলতে চায় না। এই ছেলে কম কথা বলে। একদিন আমাকেও বলে বসলেন। আসলে কথা না বলেই কোনকিছুর আপনা আপনি উত্তর পাওয়া যায়, সর্বোত্তম প্রতিশোধ নেওয়া যায়, জব্দ করা যায়।আবার মানুষকে ভালও বাসা যায়।
নিজেকে বড় বলে, মহৎ বলে পরিচয় করে বেড়াবার কোন মানে হয় না। মানুষের কাছে আমাকে যা বলে মনে হয়, আমি ঠিক সে রকম না হলেও, আমি তাদের কাছে ঠিক তাই।অযথা কথা বাড়িয়ে লাভ কি?
আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি। ভালোবাসি বলেই আমি লন্ডন থেকে চলে এসেছিলাম।
এক দুপুর বেলার কথা। কলেজ থেকে বের হয়ে চেরি গাছের নীচে লাঞ্চ করতে বসেছি। হটাত দেখি- আমার সামনে এক পাকিস্তানি বয়স্ক দম্পতি বসে আছেন । তারা দুজনে খোশগল্প করছেন। তাদেরকে দেখে আপনাদের কথা খুব মনে পড়ল। সিধান্ত নিলাম, আপনারা যতদিন পৃথিবীতে আছেন,আমি ততদিন আপনাদের সঙ্গেই থাকব।দেশে চলে যাব। কখনও মনেই হয়নি আমিই আপনাদের লন্ডনে নিয়ে আসব।
আমি ছোট্ট মানুষ, ছোট্ট মগজে যা খেলেছে তাই করেছি। আমি আপনার কাছে চলে এলাম, আর আপনি অভিমান নিয়ে চলে গেলেন। আহা বাজান আমার! আপনি অকারণে আমার কাছ থেকে অনেক কষ্ট পেয়েছেন। আপনার কাছে ক্ষমা চাওয়া হলো না আমার।
মাঝে মাঝে আপনার মৃত্যুর জন্য আমার নিজেকেই দায়ী মনে হয়। মনে হয়, আর একটু চেষ্টা করলে বোধহয় আপনি বেঁচে যেতেন। ব্যর্থ নাবিকের মত হাল ছেড়ে দিয়ে জাহাজ ডোবার দৃশ্য না দেখলেই বোধহয় পারতাম।
আপনার মৃত্যুর পর আপনার সমস্ত সার্টিফিকেট গুলো দেখলাম। মুক্তিযুদ্ধের আগে আপনি শেরপুর জেলার শেরপুর কলেজে আইএসসি পড়েছেন।তারপর বিএসসি পাশ করেছেন। কত দূর থেকে , প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসে এখানে পড়াশুনা করেছেন। রাস্তাঘাট নেই,বাস নেই, রিকশা নেই , সাইকেল নেই। বকশিগঞ্জ থেকে আমার সেই লন্ডন যেয়ে পড়া আর আপনার ধানুয়া কামালপুর থেকে শেরপুর এসে পড়া একই কথা। তার চেয়েও বেশি কিছু।
আমি বরাবরই ভাবতাম, আপনি একজন যান্ত্রিক মানুষ।কর্ম ছাড়া কিছু বুঝেন না। একদিন মনে হলো , আপনাকে বলি- আপনি একটা যন্ত্র। আপনার মাঝে কোন আবেগ নেই। জানালা দিয়ে এক ফোটা বৃষ্টি দেখার সময় নেই। আপনার পাশে এসে বসেছি। কথাটা বলব। ঠিক তখনই আপনার শরীরের ভাষা, মনের ভাষা, হৃদয় গভীরে যে ভাষা স্পন্দিত হয় সে ভাষা, তার সমস্তটাই আমি আপনা আপনি বুঝতে পেরেছিলাম।কোন এক গভীর দুঃখবোধ থেকে হয়ত তখন আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুলতে শুরু করেছিল।
আপনি মোটেও যান্ত্রিক না। প্রচণ্ড আবেগি একজন মানুষ। আপনার বাবার মৃত্যুর পর আপনি আপনার বাবাকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারেন নি। তাইতো নিজেকে সব সময় ব্যাস্ত রাখতেন। আপনার কাজ গুলো সময় মত শেষ করতে চেয়েছেন।
আপনার জানাজার নামাজে অনেক মানুষ এসে জড়ো হয়েছে। কোন এক ফাঁক থেকে একজন মহিলা ম্যাজিস্ট্রেট এসে আমাকে বললেন, আপনার বাবার লাশ কখন আনা হয়েছে? আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে তার হার্ট দেখেছিলাম। টিক টিক করছে। কোন বক্রতা নেই। সরল ভাবেই বলেছেন। তিনি তো সত্যিই বলেছেন, আপনি লাশ হয়ে গেছেন। মুহূর্তে যেন সব ঘটে গেলো। আমরা এরকম আয়োজন কখনো করতে চাইনি। তবু আমাদের আয়োজন করতে হয় , সাজতে হয়, বিদায় জানাতে হয়। আহা কি যে কষ্ট!
সেদিন আপনার গড়া ,আপনার আদি বাড়িতে গিয়েছিলাম। গাছগাছালি। পাখির কাকলী । একপাশে দাদা দাদীর কবর। আর কত ভাসমান মানুষ এসে আশ্রয় নিয়েছে। ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করছে। তাদের কারও ঘর নেই, জমাজমি নেই। এখানে এসে কর্ম করছে।আপনি নিঃস্বার্থ তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। আপনার অনেকগুলো সৎকর্মের মধ্যে এই সৎকর্মটি আমার কছে মহৎ মনে হয়েছে। অজান্তেই আনন্দে চোখে পানি এসে গেলো।
আমি সবসময় আপনার মত একজন আদর্শবান মানুষ, সৎ মানুষ হতে চেয়েছি। তাইতো গোপনে আপনাকে আমি প্রতিনিয়ত পরাজিত করতে চেয়েছি। আপনাকে পিছনে ফেলে সম্মুখে এগিয়ে যেতে চেয়েছি।
কখনো পেরেছি আবার কখনো আপনার কাছে হেরেছি।
নাসিরাবাদে ইন্টার পড়ার সময় এক সন্ধ্যায় আমি ছুটিতে বাড়িতে এসেছি। আপনি খুশিতে বাসায় এসে দেখলেন, আমি নেই । বাজারে ঘুরতে গিয়েছি। আমাকে দেখার জন্য আপনি বাজারেই ছুটে গেলেন। আমাকে দেখে আপনার কি যে আনন্দ! ঠিক সেই মুহূর্তে একটা পাগলা কুকুর এসে আপনার পায়ে কামড়ে ধরল । সে অবস্থাতেও আপনি আমাকে বললেন, বাবা কখন এসেছ! আপনার ভালোবাসার কাছে সেদিন নিজেকে অনেক তুচ্ছ মনে হয়েছিল।
আব্বা আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি। আপনাকে ভীষণ রকম ভাবে মনে পড়ে।
বিবিএ পড়ার সময় এক রাতে আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছা হলো । সেই রাতেই বাড়িতে রওনা হলাম। বাড়ি
পৌঁছে ,আপনার সামনে দাঁড়াতেই আপনি কি যে খুশি হলেন। ফুলের মুকুলের মত ফুটে উঠলেন ।
সেই মুহূর্তে আমার মনে হয়েছিল, আমি হুমায়ুন মির্জা ,সম্রাটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
কিছুদিন আগেও আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছা হয়েছিল। বাড়িতে ছুটে এসেছি।আমার মনেই নেই যে ,আপনি নেই । যে আম গাছটার নীচে দাঁড়িয়ে আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করতেন, সেখানে এসে দাঁড়াতেই মনে হলো , আপনি নেই । আমাদের ছেড়ে বহুদূর চলে গেছেন। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করল । কাঁদতে পারলাম না। আমি কান্না করলে পরিবারের অন্য সদস্যরা ভেঙ্গে পড়বে। তাই নিজের কণ্ঠকে এক সুশৃঙ্খল শিকলে আটকে রেখেছিলাম।
ঈদ এলেই আমার একটা স্মৃতি খুব মনে হয়।
ঈদের দিন সকাল বেলা। আকাশ খুব পরিষ্কার। নীল আকাশ। পশ্চিম আকাশে ধবধবে এক খন্ড শাদা মেঘ। ধীরে ধীরে দক্ষিণের দিকে যাচ্ছে। আমাদের বাড়ীর পাশের রাস্তাটি তখনো পাকা হয়নি। কাঁচা রাস্তা। আমরা বড় গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আপনি একটা শাদা পাঞ্জাবি পরেছেন। আমার গায়েও শাদা পাঞ্জাবি আর ভাইয়ার গায়ে আকাশি রঙের। মৃদু বাতাস দিচ্ছে। সামনে সবুজ ধান ক্ষেত বাতাসের দোলায় ঢেউ খেলছে। একজন আধা বয়স্ক ফকির লাঠি হাতে দৌড়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো।
তার লাঠির মাথায় লোহার তিনটা চুড়ি। ঝুন ঝুন শব্দ হচ্ছে। তার মখুটাও হাসি হাসি। আপনি তাকে চকচকে একটা বিশ টাকা নোট বের করে দিলেন। মুহূর্তটা আরও জ্বলে উঠলো। উজ্জ্বল হয়ে গেলো।
আমরা এই পৃথিবী থেকে কোন কিছুই নিয়ে যেতে পারবো না। শুধু এই ফিলিংস গুলোই নিয়ে যেতে পারবো এবং অন্যের মাঝে রেখে যেতে পারবো।
আজ সেই ফকিরও নেই, দিনটিও নেই, আপনিও নেই কিন্তু ফিলিংসটা রয়ে গেছে। প্রত্যেক পিতারই উচিৎ সন্তানদের সামনে এরকম কিছু মুহুর্ত তৈরী করা। যেন সন্তানরা প্রকৃত জ্ঞান লাভ করতে পারে। প্রত্যেক পিতার বুকেই একটা বিশ্ববিদ্যালয় লুকিয়ে আছে। আর আমি আপনার কাছ থেকেই শিক্ষা লাভ করতে চেয়েছি।ঈদ আসার আগে যখনই ভাবি এবার ঈদ বকশীগঞ্জে করবোনা, আর তখনই আমার এই স্মৃতিটা মনে পড়ে। যেখানেই থাকি না কেন ঈদ করার জন্য বকশীগঞ্জে ছুটে আসি। আহা বাজান অমার ! একদিন আপনি এই পৃথীবিতে ছিলেন।আর আপনাকে ঘিরে ছিল আমাদের ভাইবোনদের পৃথিবী।
এবার ঈদে আমার খুব অস্থির লাগছিল। ভাবলাম, শরীরের ভিতরে কোন ফাংশন সিস্টেমে সমস্যা হয়েছে।
পরে বুঝতে পারলাম আপনার বিয়োগে এমন হচ্ছে। আপনি নেই, আমার বিশ্বাস হয় না। বিশ্বাস হতে চায় না।
ঈদের নামাজ পর আপনার কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। ভেবেছিলাম,সেই পরিচিত কণ্ঠস্বরে ডাক শুনতে পাব-নিশো । অপেক্ষা করলাম। কিন্তু আপনার ডাক শুনতে পেলাম না। আপনি কি নিঃশব্দে, শ্রান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছেন। এক বুক অভিমান নিয়ে ফিরে এলাম।
আব্বা আপনাকে খুব মনে পড়ছে। ভীষণ রকম মনে পড়ছে।
আপনার কনিষ্ঠ পুত্র নিশো