
প্রেমিকার কঙ্কাল
January 25, 2025
কাছের মানুষ
January 27, 2025
নীলস্বপ্ন
উপন্যাসের শুরুর দিকে কেন্দ্রীয় চরিত্র রঞ্জুর বাবার মৃত্যু হয়।রঞ্জু সেসময় বাবার কাছ থেকে অনেক দূরে থাকলেও অনুভব করতে পারে বিয়োগ ব্যাথ্যা।এরপর রঞ্জু বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছেড়ে বসবাস করতে থাকে বাবার স্বপ্নের ছায়াকুটিরে।পাশে এসে দাড়ায় তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা। তাদের সঞ্চিত সম্পদ দিয়ে ছায়াকুটির সাজাতে সাহায্য করে।রঞ্জু স্বভাবে খামখেয়ালি ধরনের। পছন্দ করে বই পড়তে,গভীর রাতে রাস্তায় হাঁটতে, কবিতা পড়তে,আবৃত্তি করতে।তার কাছে ভালো থাকা মানে হলো হার্ট পালস্ ভালো থাকা।রঞ্জু ভালোবাসে রিয়াকে।কিন্তু মুখ ফুটে বলা হয়না।একদিন সবাইকে চমকে দিয়ে বিসিএসে প্রথম হয় রঞ্জু। তারপর সব কিছু এক মূহুর্তে এলোমেলো হয়ে যায়।স্রোতের মতো দুঃসময় নিয়ে এগিয়ে আসে দুঃস্বপ্নের ঝড়।রঞ্জু কি রিয়ার কাছে প্রকাশ করতে পারে তার ভলোবাসার অনুভূতি গুলো?আগলে রাখতে পারে ছায়া কুটিরকে?নীলস্বপ্ন কি দুঃখের নাকি সুখের??
জানতে চাইলে বইটি পড়তেই হবে।
.নীলস্বপ্ন বইটি মাঝারি পরিসরের একটি উপন্যাস। লেখক অনেক গুলো চরিত্রের সমন্বয়ে একাধিক গল্পকে এক সূত্রে গেঁথেছেন।যেগুলোর মধ্যে ভালোবাসা, সংগ্রাম,বন্ধুত্ব স্থান পেয়েছে।এই ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় বর্ণনা সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছেন লেখক।লেখকের জীবনাদর্শন সত্যিই চমৎকার যা আমাকে ভীষনভাবে মুগ্ধ করেছে।
লেখনীর ভাষা সহজবোধ্য ও সাবলীল হওয়ায় যে কারো জন্য কহিনীতে ডুবে যাওয়া স্বাভাবিক।
বইটিতে অপ্রয়োজনীয় কোনো সংলাপ ছিলনা বললেই চলে। বইটির কথাটি ' পাগলদেরও যে আনন্দ-বেদনার অনুভূতি আছে তা মনজু পাগলাকে দেখে স্পষ্ট বোঝা গেল।'
আমাকে খুব ছুঁয়েছে।ছোটো বেলায় আমার স্কুলে যাওয়ার পথে বসে থাকা মনজু পাগলার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।যদি আমি কখনো তার সাথে
মোরগপোলাও ভাগ করতাম তবে কেমন হতো??
বইটিতে অন্যান্য চরিত্র গুলো যেমন রফিক,বীথী, পারুল, মোশারফ মামা, রেহানা চাচী মন ছুঁয়ে গেছে।সাথে রঞ্জুর কবিতা আবৃত্তি, যেমন-
কখনো কখনো ইচ্ছে হয়.
ভুলে যাব চাঁদ, আর নিশুতি রাত।
নীল অভিমানে পুরে একা,
শুধু চোখের জলের ক্ষয়!
মনে নতুন দৃশ্যপট তৈরি করে দিয়েছে।প্রচ্ছদ, বাধাই, পৃষ্ঠা সজ্জা, কিছু বানান ভূল ছাড়া কোথাও কোনো কমতি রাখেনি লেখক ও প্রকাশক।
.
বইটিতে আমার ভালোলাগার একটি অংশ হলোঃ
'আচ্ছা, তোমার কী ভালো লাগে?
কবিতা আবৃত্তি।বই পড়তে, গভীর রাতে রাস্তায় হাঁটতে।
কবিতা পড়ে কী লাভ?
কবিতার সাথে জীবনের আশ্চর্য এক সম্পর্ক।মনের শক্তি বৃদ্ধি করে। আমেরিকার মহান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন মনের শক্তি বৃদ্ধির জন্য কবিতা আবৃত্তি করতেন।ধরুন আপনার মন কোনো কারনে খারাপ, তখন আপনার কী করা উচিত?
কী করা উচিত?
আপনার প্রিয় পোশাকটি পরে একটা কবিতা আবৃত্তি করা উচিত। শরীর ও মন ফুরফুরে হয়ে যাবে। ব্রেইন আলফা লভেলে নেমে আসবে। হৃদয় প্রসারিত হবে।তবে সবচেয়ে ভালো হয়...
সবচেয়ে ভালো হয় কী?
আপনার যেখানে কবিতা পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে সেই জায়গার পরিবেশ সাজিয়ে গুছিয়ে নিলে।আপনার ইচ্ছে হলো ফাঁসি সম্পর্কে কবিতা পড়তে। আপনি সেখানে ফাঁসির দড়িও ঝুলিয়ে রাখতে পারেন।'
.
বইটিতে অনেক উক্তি ও অসাধার কিছু লাইন রয়েছে।আমার প্রিয় কয়েকটি হলোঃ
- প্রত্যেকটা মানুষ যখন ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে আসে তার পরিচয় হয় রোগী হিসাবে। অন্য কোনো পরিচয় এখানে আর প্রয়োজন নেই।
- পাগল কি কখনো নিজেকে পাগল বলে পরিচয় দেয়!
- মেয়েরা শাড়ি পরে দুই কারণে - মন খুব খারাপ হলে আবার খুব ভালো থাকলে।
- কিছু মানুষের পাগলামি তার চারপাশের মানুষের জন্য একটা সুন্দর মুহুর্ত তৈরি করে।